২ দিনের নবজাতককে কোলে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে মা

- ১১:১৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
- / 38

শামীমুল ইসলাম, চরফ্যাশন ॥
ভোলার চরফ্যাশনে এক নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছে একটি এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র। মাত্র ২ দিন বয়সী কন্যাশিশুকে কোলে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছেন এক নারী—তবে পরীক্ষার্থী তিনি নন, তিনি পরীক্ষার্থীর মা। সদ্য সন্তানের মা হওয়া মেয়েটির দৃঢ় ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে পরীক্ষাকক্ষে মেয়ের পরীক্ষা চলাকালে নাতনিকে কোলে নিয়ে অপেক্ষা করছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) চরফ্যাশন ফাতেমা মতিন মহাবিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে একটি কক্ষে এক নারীকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু সন্তান কোলে নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। জানতে চাইলে তিনি জানান, তার মেয়ে ফাবিহা খানমের সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আর আরেকটি পরীক্ষা কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে নবজাতকের মা।
জানা গেছে, ফাবিয়া খানম নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী উপজেলার আবুবকরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো.মাকসুদ খানের মেয়ে। গত দেড় বছর আগে একই উপজেলার জাহিদুল ইসলাম সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরীক্ষা শুরুর ২ দিন আগে অর্থাৎ গত মঙ্গলবার কন্যা সন্তানের মা হয় ফাবিহা। এরপর ২ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ফাবিহা খানম চরফ্যাশন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।
পরীক্ষার্থীর মা ও সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুটির নানি খাজিদা বেগম বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী এলাকার জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। সন্তানসম্ভবা থাকা অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করেছে।আমার মেয়ে গর্ভকালেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। পরীক্ষা শুরুর ঠিক ২ দিন আগে, গত মঙ্গলবার, তিনি জন্ম দেন একটি কন্যা সন্তানের। নবজাতককে নিয়েই বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ফাবিহা।ওর ইচ্ছা ছিল, পরীক্ষাটা দিতেই হবে। আমরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় থাকলেও ওর সাহস আর ইচ্ছার কাছে হার মেনেছি। তাই আজ নাতিকে নিয়ে এখানে এসেছি।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রফেসর মোহাম্মদ উল্লাহ স্বপ্ন জানান, সারা দেশে একযোগে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রথম দিন পরীক্ষা চলাকালে হলের সামনে বাহিরে এক নারীকে শিশু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জানতে পারি, নবজাতকটি একজন পরীক্ষার্থীর। পরে আমরা খালি একটি কক্ষের ব্যবস্থা করে দেই যেন তারা কিছুটা আরামে থাকতে পারেন। অল্প বয়সে সন্তানের মা হলেও পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহের বিষয়টি আমাদেরকে আশান্বিত করেছে।
এই ঘটনায় কেন্দ্রের শিক্ষক-পর্যবেক্ষকরাও আবেগাপ্লুত। তারা জানান, অল্প বয়সে সন্তানের মা হওয়া ফাবিহার পড়াশোনার প্রতি এমন অটল আগ্রহ আগামী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা।