বুধবার দিনভর ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা
বরিশালে বাস ধর্মঘটে অচল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।
- ০২:১০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / 174

নাঈমুর রহমান ছরোয়ার ॥ বরিশালে শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা গভীর রাতে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। তবে বুধবার সকালে শ্রমিকরা নতুন করে ধর্মঘট শুরু করায় নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে বিভাগের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। শ্রমিকদের দাবি, জান-মালের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ১৫টি রুটে বাস শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বরিশালসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। ধর্মঘটের কারণে বুধবার দিনভর বাসটার্মিনালে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেককে থ্রি-হুইলার, সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে করে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে রওনা দিতে দেখা গেছে। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। বুধবার বিকালে বরিশাল শহরের রূপাতলী টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। সরেজমিনে দেখা যায়, ধর্মঘটের কারণে টার্মিনালে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে শতশত বাস। এ কারণে রূপাতলী বাসটার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বরিশাল-খুলনা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণরুট পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি, নলছিটি, বরগুনা, বাউফল, পটুয়াখালি, কুয়াকাটায় বাস চলাচল করছে না। ফলে এই ১১ রুটের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগকে সঙ্গী করে থ্রিহুইলার বা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজে বরিশাল এসে ধর্মঘটে আটকে পড়েছেন পিরোজপুরের যাত্রী আবদুর রহমান। বয়োবৃদ্ধ এই ব্যক্তি হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন কীভাবে গন্তব্যে যাব জানি না। তুচ্ছ ঘটনায় কিছু দিন পরপর এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী ঢাকা মেইলকে জানান, মালিক-শ্রমিকদের জানমালের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের এক ছাত্রীর কাছ থেকে হাফভাড়া আদায় নিয়ে ঝালকাঠি রুটের একটি বাসের হেলপার খারাপ আচরণ করেন। এরপর শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মীমাংসার জন্য টার্মিনালে গেলে তিনজনকে শ্রমিকরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ। এরপর শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পাঁচটি বাস ও শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। এরপর মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেন রূপাতলী বাসটার্মিনালের শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মালিকরাও দাবি আদায়ে জোট বেঁধেছেন। রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, কথায় কথায় আমাদের ওপর হামলা-গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নাই। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকবার আমাদের শ্রমিক অফিস ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবারও আমাদের অফিস ভাঙচুর করেছেন তারা। আমরা এসব কার্যক্রম থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ চাই। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে বলেন, বাস-মালিক শ্রমিকরা মিটিংয়ে বসেছেন। এরপর তারা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে মিটিং করবেন। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার হতে পারে বলে জানান তিনি।























